আমি নিজেও একজন বড়মাপের সায়েন্স অলা, বস্তুত দেশের শীর্ষ লেভেলের সায়েন্স অলাদের একজন। তারপরও বলছি, সায়েন্স অলাদের পরিমিতবোধের বড় অভাব। বিশেষ করে, বাংলাদেশের সায়েন্স অলাদের। এই সমস্যা আমার নিজেরও কিছুটা ছিল, তবে সেটা আমি অতিক্রম করে এসেছি। এখন আমি ব্যাপকভাবে বুঝতে পারছি, দেশে সায়েন্স অলাদের পরিমিতবোধের বড় অভাব। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ডাঃ মুরাদ এবং তাঁর মন্তব্যগুলো।
যাঁরা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনেন, তাঁরা হয়তো বলবেন, ‘আপনার ডিগ্রী ও সার্টিফিকেট থাকলেও আপনি সত্যিকার সায়েন্স অলা নন। তাই সায়েন্স অলাদের বিরুদ্ধে বলছেন‘। তাঁদের মন্তব্যের জবাবে বলছি, আমার সেটার দরকারও নেই। যাঁরা দেশে ডাক্তার, প্রকৌশলী, সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট, মাস্টার্স হতে চায়, তাঁদের উদ্দেশ্য মূলতঃ নিম্নরূপঃ
(১) ফ্যামিলি স্ট্যাটাস বাড়ানো, সমাজে সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করা
(২) উঁচু বেতনের চাকুরি বাগানো
(৩) বোনের বিয়ে দেওয়া (ফ্যামিলি স্ট্যাটাস বাড়লে বোনের ভালো বিয়ে দিতে পারবে)
এ প্রসঙ্গে আমার লেখা নিম্নোক্ত আর্টিক্যালটি পড়তে পারেনঃ
নিজের মেয়ে, বোন আর ভাগ্নি বিয়ে দেয়া ছাড়া বাঙালীরা আর কিছুই বোঝে না
দেশের শিক্ষিত মানুষদের এসব ভণ্ডামির কথা সবাই জেনে গেছে, তাই এখন শুধুমাত্র শিক্ষিত হওয়ায় সম্মান মেলে না। শ্রমজীবিরাও নিজেদেরকে সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। সেটার অধিকার তাঁদের আছে বৈকি।
সায়েন্স অলাদের এরূপ বিকৃত মানসিকতার কারণ হলো, পড়াশুনায় ব্যাপক চাপ। উপরন্তু, দেশের পড়াশুনার পদ্ধতি নিতান্ত নিরানন্দ। আনন্দ সহকারে পড়াশুনা কী, দেশের মানুষ সেটা বলতে পারবে না, তাদের কাছে পড়াশুনাটা হয়ে গেছে তিতো ট্যাবলেটের মতো।
ডাঃ মুরাদ ভেবেছিল, ‘আমি যেহেতু ইসলামের বিরুদ্ধে বলছি, সুতরাং আমাকে আর পায় কে? আওয়ামী সরকার তো বটেই, সমগ্র ইন্ডিয়া আর ইসরাইলের সরকারও আমাকে ব্যাকআপ করবে। সুতরাং যেটা ইচ্ছে সেটা বলাই যায়।‘ তাই তো সে উল্টো-পাল্টা বলে এখন দেশবাসীদের তোপের মুখে আছে।
সায়েন্স অলারা যখন মজা বা ফান বা কৌতুক করে, তখন হিতাহিতবোধ বলতে কিছু থাকে না, বড়-ছোট ভুলে যায়, সুস্থতা আর নোংরামির মধ্যে পার্থক্য ভুলে যায়। তারা কথায় কথায় মিমিক করতে চেষ্টা করে। মিমিক করতে গিয়ে মনীষিদের ভালো গুণাবলীর চেয়ে তাঁদের দোষত্রুটিগুলো বেশি করে অর্জন করে। যেমনঃ যখন তারা জানতে পারে যে, নিউটন আর আইনস্টাইন চেইন স্মোকার ছিলেন, তখন তারাও চেইন স্মোকার হওয়ার দিকে মনোযোগী হয়, এমনকি মেয়েরাও।
সায়েন্স অলারা চরমপন্থী; হয় কাঠমোল্লা, নয়তো কাঠনাস্তিক। কাঠনাস্তিক বলতে সেই সকল নাস্তিকদের বুঝানো হয়েছে, যারা কিনা বলে, ঈশ্বর বলতে কিছু নেই, কেউ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে নি। আরে বাবা (আবে ইয়ার), মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে কেউ রয়েছে কিনা, সেটা তুমি তোমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক দিয়ে কীভাবে জাজ্ করবে? তুমি বড়জোর বলতে পারো যে, প্রচলিত ধর্মগুলো ভুয়া আর মানবসৃষ্ট।
এসব নব্য স্বার্থকায়েমী নাস্তিক বলে যে, ঈশ্বরকে কোনোদিন দেখি নাই, তাঁর কাছ থেকে শুনি নাই, সুতরাং ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব নাই। আমি বলি কি, তোমরা তো তোমাদের মস্তিষ্ক কোনোদিন দেখো নাই, তাহলে ধরে নাও যে, তোমাদের মস্তিষ্ক নাই। নাস্তিকতা সম্পর্কে আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিম্নোক্ত ব্লগে বর্ণিত হয়েছে।
যেমনটা বলছিলাম, সায়েন্স অলাদের পরিমিতবোধ নেই। তাই মজা বা কৌতুক করলেও সেটা সর্বোচ্চ কতটা পর্যন্ত করতে হয়, সেটার আন্দাজ তাদের নেই। তাই ‘নার্নিয়া’ নামক মুভির একটি ডায়ালগ অনুসারে বলতে হয়, দে জাস্ট ডোন্ট নো হয়েন টু স্টপ। তারা চরমপন্থী ঘরানার; যেমনঃ নেশাখোর হলে সিগারেট, গাঁজা, হিরোইন, মদ সব গিলতে হবে, তাও রেগুলার বেসিস। আর নেশাখোর না হলে চা-কফিও খাবে না (পান করবে না), সত্যিই তারা খুবই অসামাজিক।
তারা খুবই মিমিকপ্রবণ (অনুকরণপ্রিয়); যখনই তারা জানতে পারে যে, বড় বড় বিজ্ঞানীরা যেমন আইনস্টাইন আর মেরি কুরি পরকীয়াকাতর ছিলেন, তখন তাদেরও পরকীয়া করা চাই। আইনস্টাইন যেমন একসাথে ছয়টা প্রেম-পরকীয়া করতেন, ঠিক তাদেরও তেমন হতে হবে।
সায়েন্স অলারা মনে করে, তারাই কেবল সফিস্টিকেটেড পড়াশুনা করে, আর্টস-কমার্স অলারা করে না। তাদের ভুল ভাঙ্গানোর জন্য একটামাত্র উদাহরণ দেই। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার নিয়ে একটু স্টাডি করেন। এসব সফটওয়্যার ব্যবহারে কমার্স অলারাই এক্সপার্ট হয়, সায়েন্স অলারা নয়।