আমার কথাবার্তা ও আদর্শে প্রভাবিত হয়ে অনেক নারী-পুরুষ তাদের লাইফস্টাইল বদলেছে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ফারহানাহ চুপমারানী, ওহ্ সরি, চৌধুরানী। সে অরিজিনালি সাতক্ষীরার মেয়ে, কিন্তু তার ডাক্তার পিতা খুলনা শহরের মৌলভিপাড়ায় একটা দুই তলা (২০১৩ সালে দেয়া তথ্য মোতাবেক) বাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে ফারহানাহ এখন নিজেকে খুলনার মেয়ে হিসেবে পরিচয় দেয়।
তবে অরিজিনালি খুলনার বাসিন্দা এমন কোনো ব্যক্তি তাকে চেপে ধরলে সে নিজেকে সাতক্ষীরার মেয়ে হিসেবে মেনে নেয়; যেমনটি ঘটেছিল ২০১৩ সালে বিথীর হোস্টেলের এক মহিলার ক্ষেত্রে। এটা খুবই অদ্ভূত যে (আমার বুঝে আসে না), নিজ জেলার মানুষ হিসেবে যখন অন্য কেউ পরিচয় দেয়, তখন বাংলাদেশের মানুষ সাধারণতঃ তাকে চেপে ধরে; চেষ্টা করে যাতে প্রথমোক্ত ব্যক্তি নিজ থেকেই স্বীকার করে নেয়, সে আসলে কোন জেলার।
যাই হোক, ‘চিলিক-বিলিক কথা না বইলা’ মেইন পয়েন্টে আসি। ফারহানাহ’র সাথে আমি কাজ করেছি একটি গাইডবুক পাবলিকেশন্স প্রতিষ্ঠানে, ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে। সেখানে সে নিজেকে ফিজিক্সের বিশাল সমঝদার হিসেবে মনে করতো, কিন্তু আসলে ফিজিক্সে তার জ্ঞান ছিল গড়পড়তা লেভেলের, এক্সট্রাঅর্ডিনারী নয়। প্রথম প্রথম সে নিজেকে উক্ত বিষয়ে চরম জ্ঞানী মনে করলেও পরবর্তীতে যখন আমার সাথে কাজ শুরু করে তখন বুঝতে পারে, সে আসলে ‘নিউটনের মতো’ ফিজিক্সের জ্ঞান সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে কয়েকটি নুড়ি কুঁড়িয়েছে মাত্র। তখন নিজেকে ডেভেলপ করার পরিবর্তে তার ক্ষোভ গিয়ে পড়ে আমার উপর, আফটার অল আমিই তার আত্মবিশ্বাসের খুঁটিতে ফাটল ধরিয়েছিলাম (যদিও সেটা অনিচ্ছাকৃত)।
প্রতিশোধ হিসেবে সে আমাকে কাজ দেয়া বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল, যেমনঃ ২০১২ এর ডিসেম্বর মাসে যখন সাঈদ ভাই ফারহানাহকে বললো, আমাকে সিকিউ-এর ফাইলগুলো দিতে এডিট করার জন্য, তখন সে যথাসম্ভব সেগুলো আটকে রেখেছিল। সে চেয়েছিল সেগুলো নাসিরউদ্দীন স্যারকে দিয়ে এডিট করাতে। নাসির স্যার আমার চেয়ে ফিজিক্স বুঝতেন বেশি, সেটা সত্য; তবে উক্ত ফাইলগুলো এডিট করার জন্য আমার জ্ঞানই ছিল ‘মোর দ্যান এনাফ’, উপরন্তু নাসির স্যারের হাতে আরো বহু ধরনের কাজ ছিল। নাসির স্যারকে ফাইলগুলো দিতে চাওয়ার পেছনে আরেকটা কারণ রয়েছে অবশ্য, আর সেটা হলো – নাসির স্যারের বাড়িও খুলনায়, খুব সম্ভবতঃ ডুমুরিয়ায়।

যাই হোক, ফিজিক্সকে যদি এতোই ভালোবেসে থাকে ফারহানাহ, তাহলে কোনো অলিম্পিয়াড নিয়ে প্যাশন দেখাতে চাইলে সেটা ফিজিক্স অলিম্পিয়াডই হওয়া উচিত ছিল, তাই না? কিন্তু দেখা গেল, ঐ পাবলিকেশন্স থেকে বিদায় নেয়ার পর সে তার ফেসবুক ওয়ালে কেবল ম্যাথ অলিম্পিয়াডের পোস্টগুলোই শেয়ার করতো, ফিজিক্সের টিকিটিরও দেখা পাওয়া গেল না সেখানে। অর্থাৎ সে এটা প্রমাণ করতে চেষ্টা করছে যে, সে ম্যাথের বিশাল একজন পৃষ্ঠপোষক এবং সমঝদার। এখানটায় আপাততঃ কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না তাকে, ‘গুড ফর হার’! সুতরাং বুঝতেই পারছেন, তার মাথা ও জীবন থেকে ফিজিক্সের ভূত চিরতরে বিদায় হয়েছে আমার কারণেই; যদিও তা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নয়, বরং ঘটনায় ঘটনায় ঘটেছে। এমনটা বলতে বাধ্য হলাম, কারণ তার এক দেশী ভাই ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমানও এই ধরনের কর্মকাণ্ড করেছিল ২০০৬ সালে।
মিজানও খুলনার লোক, সে কোচিং সেন্টার ওমেকা’র চারজন কর্ণধারের একজন। অবশ্য এখনও সে উক্ত কোচিং সেন্টারের কর্ণধার আছে কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নই আমি; কারণ দীর্ঘদিন ধরে সেখানে যাই না (২০১২ সালে পলাশ ভাই যখন আমার সাথে ‘চাড়াল’-এর মতো আচরণ করলেন, তখন থেকে। পলাশও ঐ কোচিং-এর একজন কর্ণধার)।
মিজান ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনাদের বাড়ি খুলনার কোথায়? শহরে না গ্রামে?’ তখন সে বলেছিল, ‘দু’ জায়গাতেই’। যাই হোক, মিজানের আসল পয়েন্টে আসি। বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং সেন্টারগুলোর খোঁজখবর যারা রাখেন বা এ সকল কোচিং সেন্টারে শিক্ষক বা অন্য কোনো পদে যারা কাজ করেছেন, তারা সবাই মিজান ভাইকে চিনে থাকবেন এবং তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে থাকবেন। তাহলে নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, মিজান ভাই ফ্রেঞ্চ, ম্প্যানিশ ও চাইনিজসহ বেশ কয়েকটি ভাষা রপ্ত করেছেন। শুধু এতটুকু জানেন না হয়তো, মিজানের এই পাগলা নেশা হয়েছিল আমার কারণেই।
২০০৬ সালে আমি যখন ওমেকাতে টিচার হিসেবে কাজ করি, তখন মিজানের সামনে স্পোকেন ইংলিশের ফুলঝুঁড়ি ছুটিয়েছিলাম, এতে হয়তো তার আঁতে ঘা লেগেছিল, ফারহানাহ’র মতো। অর্থাৎ আমার সাথে সাক্ষাৎ ‘হোনেসে পেহেলে’ মিজানের ধারণা ছিল সে নিজেই বিশাল একটা জ্ঞানী (যদিও সেটা একেবারে মিথ্যে নয়, তবে আজেবাজে টাইপের ইউজলেস জ্ঞান ও তথ্য দিয়ে সে তার মাথা ভরে ফেলেছিল)। এখন আমার স্পোকেন ইংলিশের নলেজ দেখে মিজান ভাবতে থাকে, ‘অনেক কিছুই তো শিখলাম জীবনে, কিন্তু স্পোকেন ইংলিশটা তো শিখি নি, ইংরেজি বলতে গেলে তো দাঁত ভেঙ্গে যায়, তো কী করা?! আর এখন থেকে শেখা শুরু করলেও তো জাকিরের সমান ইংরেজি শিখতে দুই পুরুষ লেগে যাবে! এখন জাকিরকে কীভাবে জব্দ করা যায়?!’
তখন তার মাথায় ইংরেজি বাদে অন্যান্য বিদেশী ভাষা শেখার পোকা ধরে; সে স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, চাইনিজ ইত্যাদি ভাষা একের পর এক শিখতে থাকে। চাইনিজ শেখার জন্য তো সে চীনে গিয়ে থেকে এসেছে প্রায় আড়াই বছর। সত্যি, একটা কথা স্বীকার না করলেই নয়, তার মতো জীবন পেলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম। সেটা অবশ্য হতে পারতো, যদি আগেভাগে বিয়ে না করতাম (তার মতো ৩৫/৩৬ পার হয়ে গেলেও যদি বিয়ে না করতাম)। আর আমার যে চরিত্র (মনমানসিকতা), তাতে বাংলাদেশে ভারতের মতো পরিবেশ থাকলে কোনোদিন বিয়ে করতাম না, কেবল মাগি লাগিয়েই দিন পার করতাম। যাই হোক, মিজানকে নিয়ে আমার পয়েন্ট বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই, তার অভ্যাস তথা দৈনন্দিন জীবন ও ভালো লাগাটাকেই আমি নিজের অজান্তে বদলে দিলাম, তার দেশী বোন ফারহানাহ’র মতো।
এবার আসি বর্তমানে আমি যে এলাকায় থাকি, অর্থাৎ যেখানে বাড়ি করেছি সেখানকার এক আওয়ামী লীগ নেতার কথায়। এলাকাটা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের একটা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড। এখানে ‘মূল’ লীগের সভাপতি হলেন হেলাল সাহেব, আমি তাকে কয়েক মাস আগে চিনেছি। গায়ের রং কালো হলেও দেখতে বেশ সুদর্শন, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব বটে। আমি তাকে মনে মনে পছন্দ করি (একজন নেতা হিসেবে), তবে তিনি আমাকে চিনেছেন মাত্র এক বা দুই মাস আগে; তাও তার সাথে আমার সরাসরি কোনো কথা হয় নি, শুধু দু’-একবার সালাম বিনিময় ছাড়া (তিনি নেতা মানুষ, সামনে পড়লে তো সালাম দিতেই হয়!)।
দুঃখজনকভাবে, এই ব্যক্তিটির জীবনেও সম্প্রতি একটি পরিবর্তন নিয়ে এসেছি আমি, নিজের অজান্তে। প্রতিদিন সকালে হোটেলে নাশতা খেয়ে বউয়ের জন্য নাশতা নিয়ে বাড়ি ফিরি, তখন সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে আসতে থাকি। আমার ফেবারিট হোটেলটা আবার সেই নেতার বাড়ির ধারে। তাই প্রায়শই তিনি দেখতেন, ‘এই বিদেশিটা কীভাবে বেয়াদবের মতো সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে যাচ্ছে!’ আমাকে বিদেশী বলার কারণ হলো, আমার হোম ডিস্ট্রিক্ট অন্য এক জেলায়, নারায়ণগঞ্জে নয়; অবশ্য আমি চার বছর বয়স হতে ঢাকায় বড় হয়েছি, আর এর আগের দুই বছর ছিলাম খুলনা শহরে।
যারা বাইরে থেকে এসে এখানে বাড়ি করেছে, তাদেরকে এখানকার লোকজন ‘বিদেশী’ বলে আত্মতৃপ্তি পায়, কারণ ‘বিদেশী’দের মতো অর্থকড়ি ও স্বচ্ছলতা তাদের নেই। যাই হোক, ‘বিদেশী’ ডাকটাতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি, যদিও আমাকে সরাসরি ‘বিদেশী’ ডাকার মতো সাহস এখনো এখানকার কারো হয় নি। তবে মেইন কথা হলো, এখানে আমরা ‘বিদেশীরা’ সেকেন্ড ক্লাস নাগরিক।
তো, একটা ‘বিদেশী’ যার কিনা হেলাল সাহেবের সাথে আলাপচারিতা নেই, সে হেলাল মিয়ার সামনে দিয়ে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে যাবে, এটা হেলাল মেনে নিতে পারেন নি। তিনি ভিতরে ভিতরে সম্ভবতঃ প্রচণ্ড আক্রোশে জ্বলে উঠলেন। তবে কিছুই করার নেই, আমি বিশাল কৌশলী, বাংলাদেশি যে কোনো মানুষের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে আমি আন্দাজ করতে পারি, সে আমার সম্পর্কে কী ধরনের মনোভাব পোষণ করছে, বা এখন আমার সাথে কী ধরনের ব্যবহার করতে পারে। আমার এই কৌশলের কারণে হেলাল কোনো পাত্তা পেল না আমার কাছে, এতে করে তার জিদ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল। আমার সাথে সুবিধা করতে না পেরে সে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে থাকলো, ‘আমার ব্যক্তিত্ত্বের মাঝে কোনো কমতি আছে কি – যে কারণে একটা বিদেশিও আমাকে সম্মান করে না?’
https://www.youtube.com/watch?v=0vWWrJmPahg
আমি অবশ্য তাকে ‘সম্মান’ বলতে যেটা বুঝায় সেটা না করলেও তাকে নেতা ও ব্যক্তি হিসেবে পছন্দ করি, শুধু তার কাছে মাথা নোয়াব না। আমি জানি, এ সকল লোক (যারা আওয়ামী লীগ করে) খুবই সুযোগসন্ধানী টাইপের, এরা কাউকে বাটে পেলে তার চূড়ান্ত দেখে নেয়; তাই হেলালের সামনে নমনীয় হওয়া যাবে না, বিশেষ করে নিজের অতি পছন্দের কোনো কিছুর বেলায়। সকালের নাশতা করে চা খেয়ে একটা সিগারেট সেবন করা আমার অতি পছন্দের একটি অভ্যাস। এমন তো না যে, সেখানে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কেউই ধুমপান করে না, তারা ‘দেশি’ লোকেরা তো সেটা ঠিকই করে রসিয়ে রসিয়ে; খালি বিদেশীরা করলেই সমস্যা? নাকি?
এরপর সাত-পাঁচ ভেবে হেলাল ব্যাটা দাড়ি রেখে দিল, তবে দাড়ি অবশ্য সে বেশি বড় করছে না। মাঝখানে কয়েকদিন চুলে কলপ না করে সে দেখাতে চেষ্টা করেছিল যে, সে আসলে ইয়াং নয়, সব চুল-দাড়ি-গোঁফ পাকা, সুতরাং তাকে বয়ষ্ক মানুষ বা সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে সম্মান দেখাতে হবে। যাই হোক, পরোক্ষভাবে আমার কারণেই সে ইয়াং বেশ দূরে সরিয়ে রেখে বুড়ো ও ‘সম্মানজনক’ মানুষের বেশ ধরলো। এটা আমার মনে হাসির উদ্রেক ছাড়া আর কোনো কিছুই করছে না!