বিপাশা হায়াত যদিও বহুদিন ধরে অভিনয় করছেন না, তবু তিনি একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবেই বেশি পরিচিত। তিনি ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ অর্থাৎ ‘কালোরাত্রি’র মাত্র তিনদিন আগে জন্মগ্রহণ করেন। সে হিসেবে বর্তমানে তাঁর বয়স ৪৭ বছর। তাঁর পিতা আবুল হায়াত একজন অভিনয়শিল্পী ও বিজ্ঞাপন মডেল হিসেবে কাজ করেন। আবুল হায়াত বুয়েট থেকে পাশ করা একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বিপাশার স্বামী তৌকির আহমেদও বুয়েট থেকে পাশ করা, তবে তিনি একজন আর্কিটেক্ট।
বিপাশা নিজেও উচ্চশিক্ষিত, তিনি ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট হতে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তিনি আগে অভিনয় ও মডেলিং করলেও বর্তমানে ছবি আঁকা ও চিত্রনাট্য লেখা নিয়ে ব্যস্ত আছেন। এছাড়া তিনি তৌকিরের সংসারও সামলান। এই দম্পতির দু’টি সন্তান রয়েছেঃ বড়টি মেয়ে, নাম আরিশা আহমেদ; ছোটটি ছেলে, নাম আরিব তৌকির আহমেদ। বিপাশার এক বোন রয়েছে, নাম নাতাশা হায়াত। নাতাশা বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রীধারী, তিনি ব্রিটেনে কর্পোরেট জব করেন বলে জানা যায়। অভিনেতা শামীম শাহেদ নাতাশার জামাই।
বিপাশা অভিনয়শিল্পী হিসেবে ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০২ সালে মেরিল-প্রথম আলো পুরষ্কার অর্জন করেন। তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পান ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আগুনের পরশমণি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য। ছবিটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশের প্রবাদপ্রতীম কথাশিল্পী মরহুম হুমায়ূন আহমেদ। ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত। মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত আরেক ছবি ‘জয়যাত্রা’-তেও অভিনয় করেন বিপাশা। ‘আগুনের পরশমণি’-তে যুবতী মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করলেও ‘জয়যাত্রা’-তে তাঁর অভিনয় মধ্যবয়ষ্কা এক নারীর চরিত্রে।
জয়নুল গ্যালারি, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের ডিভাইন আর্ট গ্যালারীসহ দেশে-বিদেশে বহুস্থানে বিপাশার আঁকা ছবিগুলোর প্রদর্শনী হয়েছে। ২০০৮ সালে বিপাশা ও তাঁর বোন নাতাশা মিলে একটি বুটিকশপ খোলেন। স্বামী তৌকিরের সাথে তাঁর প্রথম দেখা ১৯৯৩ সালের বিটিভি ধারাবাহিক ‘রূপনগর’-এ অভিনয় করতে গিয়ে। নাটকটিতে এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাস ও তার ভয়াবহ পরিণতি দেখানো হয়েছে। নাটকটিতে বিপাশার চরিত্র সাদামাটা টাইপের হলেও প্রধান চরিত্র তৌকির ও খলনায়ক খালেদ খানের অভিনয় সবার মন ছুঁয়েছে।
বিপাশার উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি, সে হিসেবে মেয়েদের মধ্যে বেশ লম্বাই বলতে হবে বিপাশাকে। তিনি ১৯৯০ সাল হতেই শিল্পকলার জগতে বিচরণ করছেন। ‘রূপনগর’ ছাড়াও অন্য যে সকল নাটকে বিপাশা অভিনয় করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘হারজিত’, ‘শুধুই তোমাকে জানি’, ‘বেলি’, ‘প্রত্যাশা’, ‘একজন অপরাধিনী’, ‘দোলা’, ‘হাসুলি’, ‘অন্তরমম’, ‘মুখোশ জীবন’, ‘সোনালী ডানার চিল’, ‘কবিতা সুন্দর না’ ইত্যাদি। তিনি ‘লাক্স’, ‘চপস্টিক নুডলস’, ‘সিঙ্গার ওয়াশিং মেশিন’, ‘ভেসলিন’, ‘ফ্রেশ লবণ’ ইত্যাদি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন।