প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে (১৯১৫ সালের দিকে) রাসপুটিন ছিলেন রাশিয়ার রাজপরিবারের একজন ঘনিষ্ঠজন ও পরামর্শদাতা। উনি ১৯১৬ সালে নৃশংসভাবে খুন হন। আজকে আপনি রাসপুটিন সম্পর্কে ইন্টারনেটে খোঁজ নিয়ে দেখেন, ৯৯% ক্ষেত্রে তাঁকে ‘ভিলেন’ হিসেবে দেখতে পাবেন। এগুলো সবই পশ্চিমা মিডিয়ার কারসাজি। কারণ তাঁকে হত্যার পেছনে বৃটেনের হাত ছিল বলে জানা যায়। আর বৃটেন বা আমেরকিা যাই করুক না কেন, সেটাকে ‘পবিত্র আর বৈধ’ কাজ বলে প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পশ্চিমা মিডিয়া। এই দুইটি দেশ যাকে একবার ‘খারাপ’ বলে, তাঁকে অন্য সবাইও খারাপ বলেই দেখা শুরু করে। চলুন এখন তাহলে জেনে নেয়া যাক, বৃটেন কী কারণে রাসপুটিনকে হত্যা করে থাকতে পারে।
রাসপুটিন নিজে ব্যক্তিগতভাবে কতটা ভালো বা খারাপ মানুষ ছিলেন, সে তর্কে যাব না। তাঁর অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে হয়তো অনেক নোংরা ব্যাপার বেরুবে। হয়তো দেখা যাবে, উনি একসময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছেন, কালো জাদু করেছেন, ধর্মের নামে অপকর্ম করেছেন। এগুলো আদৌ সত্য কিনা সেটা যাচাই-বাছাই করা এ মুহূর্তে সম্ভব নয়, কারণ পশ্চিমা মিডিয়া অলরেডি ওনার নামকে কলঙ্কিত করেছে। তবে উনি যে কারণে নিহত হয়েছেন, সেটা সত্যিই চমকপ্রদ। রাসপুটিন আসলে স্বদেশের (রাশিয়া) প্রতি দেশপ্রেম দেখাতে গিয়েই নিহত হয়েছিলেন। রাশিয়ার তৎকালীন সম্রাট (সর্বশেষ জার) নিকোলাস একটু দুর্বল প্রকৃতির ছিলেন, তিনি তাঁর স্ত্রীর কথামতো দেশ চালনা করতেন; আর তাঁর স্ত্রী আলেকজান্দ্রিয়া রাসপুটিনের পরামর্শমতো চলতেন। অর্থাৎ বলতে গেলে, রাসপুটিনই ছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান চালিকাশক্তি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন একটা সময়ে রাসপুটিনের মাথায় এই বুদ্ধি আসে যে, জার্মানীর সাথে রাশিয়ার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াটা অর্থহীন; তিনি মনে করলেন, রাশিয়া চাইলেই জার্মানীর সাথে সমঝোতা করতে পারে। তাঁর এই আইডিয়ার খবর ব্রিটেনের সরকারের কানে যায়। ব্রিটেন বুঝতে পারে যে, রাশিয়া যদি জার্মানীর সাথে সন্ধি বা আপোস করে, তাহলে জার্মানী এবার তার সমস্ত সৈন্য নিয়ে শুধুমাত্র ব্রিটেনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, সুতরাং এটা তারা কিছুতেই হতে দেবে না। তাই তারা তখন রাসপুটিনকে খুন করার পরিকল্পনা করে। যে রাশিয়ান ব্যক্তি রাসপুটিনের খুনি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন, প্রকৃত খুনি ছিল ঐ ব্যক্তির বন্ধু বা ঘনিষ্ঠজন, যিনি নাগরিকতায় ব্রিটিশ ছিলেন। রাসপুটিনকে আটকে প্রথমে একটি পানীয় পান করার জন্য বলা হয়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এতে বিষ মিশানো আছে। তাই তিনি সেটা পান করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয় এবং বেশ কয়েকবার গুলি করা হয়। তবে কপালে যে গুলিটি করা হয়, সেটির কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই গুলিটি অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা ছিল, এ ধরনের গুলি কেবল ব্রিটেনেই তৈরি হয়। এভাবেই পরবর্তীতে জানা যায়, রাসপুটিনের প্রকৃত খুনি কারা ছিল এবং কেন তারা তাঁকে খুন করেছিল।