ছোটকালে ক্লাস ফোর থেকে এইট পর্যন্ত এক মহিলা টিচারের কাছে পড়েছিলাম, তার নাম ছিল সেলিনা। তার ও তার স্বামীর বাড়ি ছিল নরসিংদীর শিবপুরে। তাদের দুই মেয়ে ছিল, নাম মিতা ও পপি। মিতা আমার চেয়ে এক বছরের বড় ছিল এবং পপি আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট ছিল। তাদের চরিত্র যে খারাপ ছিল – সেটা সরাসরি বলতে পারবো না। শুধু এতটুকু দেখেছি যে, পপির বয়স যখন ২০-২২ বছর তখন দিনের পর দিন সে রাস্তার চিপায় দাঁড়িয়ে ছেলেদের সাথে আলাপ করেছে। সেটা যে প্রেমালাপ এতে কোনো সন্দেহ নেই, তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে এটা স্পষ্ট। আর দু’দিন পরপর ছেলে পাল্টাতো, আজকে এই ছেলে তো কালকে আরেক ছেলে। পাশ দিয়ে কে গেল, সেটা পরিচিত নাকি অপরিচিত, সেটার তোয়াক্কা করতো না পপি। এমনকি তাকে এভাবে আলাপ করতে আমার মাও দেখেছে। তার এই আচরণ থেকে স্পষ্ট যে, ঐ সময় যৌবনের উত্তাপের চোটে সে হিতাহিত জ্ঞান ভুলে গিয়েছিল।
মজার ব্যাপার হলো এই পপিকেই আমি একদিন রাতে (যখন আমার বয়স ১১ আর তার বয়স ৯) ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলাম (সে রাতে কোনো একটা কারণে পপি আমাদের বাসায় ছিল, প্লাস আমার সাথে একই বিছানায় শুয়েছিল)। সেই গল্প সে নিশ্চয়ই তার মাকে মানে আমার মহিলা টিচার সেলিনাকে শুনিয়েছে। ওহ, বলতে ভুলে গেলাম যে, সেলিনা আসলে আমাকে বাসায় এসে পড়াতেন।
তাদের আর্থিক অবস্থা বাড়াবাড়ি রকম খারাপ ছিল। তার স্বামী রাজমিস্ত্রী হলেও বেশিরভাগ সময় শুয়ে-বসে কাটাতো। আর সেলিনা একগাদা ছেলে-মেয়ে পড়িয়ে সংসারটা কোনোমতে টেনে নিচ্ছিলো। যাই হোক, এখানে আপনারা নিশ্চয়ই সেলিনার দুঃখের কাহিনী শুনতে আসেন নি, এসেছেন পপি আর মিতার কাহিনী শুনতে; সেটাই বলতে যাচ্ছি।
মেট্রিক পরীক্ষা দেয়ার পর পপির সাথে একা এক রুমে, তবে..
মেট্রিক পরীক্ষা দেয়ার পরপরই সেই ‘মাস্টরনি’ খালাম্মা তার ছোট মেয়ে পপিকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিলেন দু’-চার দিন ফ্রি ফ্রি পড়ানোর জন্য, আফটার অল উনি দীর্ঘ একটা সময় আমার প্রাইভেট টিউটর ছিলেন। আসলে সেলিনার ইচ্ছে ছিল, তার ছোট বা বড় – কোনো একটা মেয়ের সাথে আমার সেটিং করিয়ে দেয়া। পপিকে ঠিকমতো পড়াতে পারলাম না, কারণ আমি পুরান সিলেবাসের স্টুডেন্ট ছিলাম আর সে ছিল নতুন সিলেবাসের। আর দরজা চাপানো থাকলেও বন্ধ ছিল না, অর্থাৎ যে কেউ ঢুকে পড়তে পারতো যে কোনো সময়। বিশেষ করে, আমার মা’র এক দূরসম্পর্কের কাজিন কামরুল মামা তখন আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। তিনি কিছুক্ষণ পরপরই রুমে ঢুকে পড়ছিলেন, আবার বেরিয়েও যাচ্ছিলেন। দরজাটা পুরোপুরি আটকানোর সুযোগ থাকলে পপির সাথে কিছু একটা করতাম তো অবশ্যই, পাশে খাট ছিল। আর পপির সলজ্জ হাসি বলে দিচ্ছিলো সে তাতে রাজি।
মিতা আমাকে আগে ‘তুই’ সম্বোধন করলেও পরে ‘আপনি’ করে ডেকেছিল
ক্লাস ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষা দিতে নরসিংদী শিবপুরে গিয়েছিলাম, পপি ও মিতাদের বাড়িতে। সেখানে শিবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার সিট পড়েছিল। তখন সে স্কুলের হেডমাস্টার ছিল সেলিনার ভাসুর, তাই কৌশলে আমার রোল নং ১ বানিয়েছিল পরীক্ষায়, যদিও সে বৃত্তি আমি সাধারণ গ্রেডেও পাই নি। আসলে ক্লাস ফাইভে আমি এভারেজ টাইপের ছাত্র ছিলাম।
সেলিনাদের বাড়িতে অবস্থানকালীন সময়ে বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম। একটি হলো – সেখানে এক রিকশায় পাঁচ-ছয় জন নেয়ার চেষ্টা করছিল কিপটা সেলিনা ও তার পরিবার। তাই ঠেলাঠেলিতে আমি রিকশা থেকে পড়ে যাই এবং কোমরে মারাত্মক ব্যথা পাই। তখন পাশ দিয়ে কোনো বাস গেলে হয়তো মারাও যেতে পারতাম। আরেকটা ব্যাপার হলো, সেলিনাদের বাড়িওয়ালার ছেলেও বৃত্তি দিতে গিয়েছিল, তার সাথে তার মা গিয়েছিল, কিন্তু আমার সাথে আমার পরিবারের কেউ যায় নি।
https://www.youtube.com/watch?v=KQISw_xH32E
চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম, বিদ্যুৎ-এর মা তার কত যত্ন-আত্তি করছে আর আমার দিকে তাকানোর মতো কেউ নেই। এর পেছনে আরেকটি কারণ ছিল – আমার বরাবরের বদ চেহারা, যার কারণে মানুষের সিমপ্যাথি স্বাভাবিকের তুলনায় সবসময়ই অনেক কম পাই।
সেলিনাদের বাসায় থাকাকালীন সময়টাতে শীতকাল ছিল এবং সেখানে আমার ঘুমের ভালো ব্যবস্থা করা হয় নি। প্লাস, বৃত্তি পরীক্ষার সময়কালে পরপর দুই পরীক্ষার মাঝে আমাকে শুধু শুকনো পরোটা আর ডাল খেতে দেয়া হয়েছিল। এ ধরনের গরীবি খাবার খেয়ে আমি অভ্যস্ত ছিলাম না, এর সবই হয়েছিল সেলিনার নিচু মানসিকতার ছোটলোক ফ্যামিলির কারণে।
তবে সবচেয়ে সারপ্রাইজিং ব্যাপার ছিল এই যে, বিদ্যুৎ ও আমি সমবয়সী হওয়া সত্ত্বেও মিতা আমাকে ‘তুই’ সম্বোধন করে ডাকছিল, যেখানে বিদ্যুৎকে ডাকছিল ‘তুমি’ করে। আমার চেয়ে এক বছরের বড় এই মিতাই কোন পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে ‘আপনি’ সম্বোধন করেছিল, সেটা দ্বিতীয় পর্বে বলবো।