

বলিউডে শান্ত-শিষ্ট, ভদ্র ও লক্ষী ইমেজের দীপিকা পাড়ুকোনকে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। তিনি ১৯৮৬ সালের ৫ই জানুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। গত কয়েক বছর জুড়ে দীপিকা শাসন করেছেন বলিউডকে, এক নম্বর ও সবচেয়ে চাহিদাযোগ্য নায়িকা হিসেবে। তবে সম্প্রতি দীপিকার বাজারদর সামান্য পড়ে গেছে বলে অনুমিত হয়, বিশেষ করে রণবীর সিং-এর সাথে তাঁর ভুল বুঝাবুঝি ও সম্পর্ক অবনতির পর।
বেশ কয়েক বছর লিভ টুগেদার করার পর রণবীর দীপিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, যা এই নায়িকা ফিরিয়ে দেন। কারণটা অনুধাবন করা খুব সহজ, বিয়ের পর নায়িকাদের চাহিদা ব্যাপকহারে কমে যায়। আর এতে এটাই স্পষ্ট যে, দীপিকা আরো বেশ কয়েক বছর বলিউডে পুরোদমে অভিনয় করতে চান। রণবীর সিং-এর সাথে তাঁর পুরোপুরি ছাড়াছাড়ি হয় নি। এখনো প্রায়ই দু’জনকে এক সাথে বিভিন্ন জায়গায়, পার্টিতে দেখা যায়। এর মানে হলো, তাঁদের দু’জনার মাঝে প্রেমের সম্পর্ক এখনো টিকে আছে।
যাই হোক, অভিনয়ের জন্য দীপিকা বেশ কয়েকটি পুরষ্কার পেয়েছেন, এর মধ্যে রয়েছে তিনটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। ‘টাইম’ ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় রেখেছে ২০১৮ সালে। দীপিকার জন্ম হয়েছিল ডেনমার্কের রাজধানী কেপেনহেগেন এবং তিনি কর্ণাটকের রাজধানী ব্যাঙ্গালুরুতে বড় হয়েছেন। কিশোরী বয়সে তিনি ভারতের জাতীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকটি ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন, তবে পরবর্তীতে ফ্যাশন মডেল হওয়ার জন্য এই খেলা ছেড়ে দেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য অফার পান এবং ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কান্নাডা ছবি ‘ঐশ্বরিয়া’-তে নাম ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে এই পেশায় অভিষেক করেন।
দীপিকা বলিউডে অভিনয়ে অভিষেক করেন শাহরুখ খানের বিপরীতে ‘ওম শান্তি ওম’ ছবির মাধ্যমে, যা ২০০৭ সালে মুক্তি পায়। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার জিতে নেন। তাঁর অভিনীত ছবির বিষয়ে পরে আবার আসব। এবার বলে নিই তাঁর ব্যক্তিগত আরো কিছু তথ্য। দীপিকার মায়ের নাম উজ্জলা, তিনি ট্রাভেল এজেন্ট ছিলেন। নায়িকার ছোট বোন আনিশা একজন গলফ খেলোয়াড়। দীপিকার দাদার নাম রমেশ, তিনি মহিশূর ব্যাডমিন্টন এসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পাড়ুকোনের বয়স যখন মাত্র ১ বছর, তখন তাঁর পরিবার ব্যাঙ্গালুরুতে বসতি গাড়ে। উক্ত মহানগরীর সোফিয়া হাই স্কুল এবং মাউন্ট কারমেল কলেজে অধ্যয়নের পর ‘ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে’ সমাজবিজ্ঞানে বি.এ. ডিগ্রী অর্জনের জন্য ভর্তি হন। কিন্তু পরে এই পড়াশুনা বাদ দেন তাঁর মডেলিং শিডিউলের সাথে সমস্যা হচ্ছিল বলে।
দীপিকা স্বীকার করেছেন যে, ছেলেবেলায় সামাজিকভাবে খুব একটা মিশুক ছিলেন না তিনি এবং তাঁর হাতেগোণা কয়েকজন মাত্র বন্ধু ছিল। সে সময় তাঁর ধ্যানজ্ঞান সবই ছিল ব্যাডমিন্টন, খুব অল্প বয়স থেকেই তিনি খেলাটি সিরিয়াসলি খেলা শুরু করেন। ২০১২ সালে নেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “আমি ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠতাম, এরপর ব্যায়াম করতে যেতাম, তারপর স্কুলে যেতাম। স্কুল থেকে ফিরে ব্যাডমিন্টন খেলতে যেতাম, তারপর স্কুলের হোমওয়ার্ক করে ঘুমোতে যেতাম।”
এবার পাড়ুকোনের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার সম্পর্কে আরো কিছু বলা যাক। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লাভ আজকাল’ এবং ২০১০ সালের ‘লাফাঙ্গে পারিন্দে’-এ ছবিদ্বয়ে দীপিকার অভিনয় প্রশংসিত হয়, কিন্তু ২০০৮ সালের ‘বাচনা এও হাসিনো’ এবং ২০১০ সালের ‘হাউজফুল’ ছবিদ্বয়ে তাঁর অভিনয় নিন্দিত হয়। বলিউডে তাঁর অপর ব্যবসাসফল ছবিগুলো হলো ‘ককটেল’, ‘ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’, ‘বাজিরাও মাস্তানি’, ‘পদ্মাবত’ এবং ‘পিকু’। এছাড়া হলিউডে তিনি ভিন ডিজেলের বিপরীতে ‘ট্রিপল এক্সঃ রিটার্ন অফ জেন্ডার কেইজ’ নামক ছবিতে অভিনয় করেছেন। ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৭ সালে এবং বেশ ব্যবসা করে।