আর্থিক লাভ তো রয়েছেই। সঙ্গে মিলবে শিক্ষাগত ক্ষেত্রে অনেক দূর যাওয়ার বিষয়েও সাহায্য। তবে শর্ত একটাই। তার জন্য ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মাদুরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার জন্য ‘বিশেষ কিছু’ করতে হবে।
একটি বেসরকারি কলেজের এক অধ্যাপিকা এমনই প্রস্তাব দিয়েছেন ওই কলেজের চার ছাত্রীকে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই অধ্যাপিকা।
রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হয়ে গিয়েছে সেই সেই কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং। এরপরই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যে। বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেয়ার পরিবর্তে যৌন প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগে পুলিশের কাছে নালিশ জানিয়েছেন ওই চার ছাত্রী। এরপর থেকে তুমুল অস্বস্তিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পর সোমবার ওই অধ্যাপিকাকে আটক করেছে পুলিশ।
গোটা ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়ে কমিটি গড়েছেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল বানোয়ারিলাল পুরোহিত। ঘটনাচক্রে যদিও রাজ্যপালের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতি রয়েছে ওই অধ্যাপিকার।
বিরুধুনগর জেলার ওই বেসরকারি কলেজে প্রায় এক দশক ধরে গণিত পড়াচ্ছেন নির্মলা দেবী। তার বিরুদ্ধেই ওই অভিযোগ এনেছে কলেজের চারজন ছাত্রী। মাদুরাই কামরাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনস্থ এক শীর্ষ কর্মকর্তার জন্য বিশেষ কিছু করার প্রস্তাবের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
ফাঁস হওয়া অডিও টেপে শোনা গিয়েছে, ওই ছাত্রীদের নির্মলা দেবী বলছেন, ‘অ্যাকাডেমিক লেভেলে আমি তোমাদের অনেক দূর নিয়ে যেতে পারি, এ কথা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।’
সেই সঙ্গে ওই শীর্ষ কর্মকর্তার উল্লেখ করে তিনি আরও বলছেন, ‘তিনি অনেক বড় কর্মকর্তা। আমি এটা দেখব যাতে তোমাদের নম্বরে (পরীক্ষার) কোনও হেরফের না হয়। আর্থিকভাবে, এমনকী অ্যাকাডেমিক সার্পোটও পাবে।’
এরপর শোনা গিয়েছে, ওই প্রস্তাবে রাজি হচ্ছেন না কলেজ ছাত্রীরা। তাতে নির্মলা দেবী বলছেন, ‘তোমরা এখনও ছোট। ভাইস চ্যান্সেলরের মতো পদে যেতে গেলেও তো রাজনৈতিক প্রভাব লাগে।’ ওই প্রস্তাবের কথা বিবেচনা করার জন্য ছাত্রীদের এক সপ্তাহ সময়ও দিয়েছেন নির্মলা দেবী। ওই অডিও টেপে-এ তার স্বরই শোনা যাচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে ছাত্রীরা ভুল বুঝেছে বলে দাবি করেছেন নির্মলা দেবী।
ছাত্রীদের যৌন প্রস্তাব দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন মাদুরাই কামরাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও।
তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম করানোর জন্যই এমন বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর পি পি চেল্লাথুরাই বলেন, ‘যে কোনও ব্যক্তিই যে কারও নাম নিতে পারেন। তার মানে এই নয় যে, সব সত্যি হয়ে যাবে। এ রকমের কোনও অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই তা তদন্ত করে দেখব। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারকে আমি পুলিশে অভিযোগ করতে নির্দেশ দেব।’
ওই বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, নির্মলা দেবীকে গত ২১ মার্চেই সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে তাতেও ক্ষোভের আগুন নেভেনি। পরে বিক্ষোভের মুখে নির্মলা দেবীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মঙ্গলবার কলেজের সামনে বিক্ষোভও দেখান তারা। গোটা বিষয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিতে মুখ খুলেছেন রাজ্যের বিরোধী নেতা এম কে স্ট্যালিন।
ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলো দেন শিক্ষক। তিনিই এ ধরনের কাজ করে তাদের জীবন নষ্ট করার চেষ্টা করছেন! হাইকোর্টের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত করা উচিত।’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা