প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম এই কারণে যে, আমার নিজেরও এধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছেঃ যাকে আমি প্রিয়জন ভেবেছিলাম, সে আমাকে শুধু ‘প্রয়োজন’ হিসেবে ব্যবহার করেছে। মেয়েটির পুরো নাম মনে নেই, তবে ডাকনাম ছিল রোজি। সে আমার চেয়ে ঠিক আট বছরের ছোট ছিল। সেটা ২০০৬ সালের শুরুর দিকের কথা, সে ঐ সময় রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়তো।
তার বাড়ি ছিল চাপাইনবাবগঞ্জে, সে কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়তো। তার ভাই রাজশাহীতে কোনো একটি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে পড়তো। আর তার প্রেমিকও সম্ভবতঃ রাজশাহীতে কোনো একটি প্রাইভেট কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল সায়েন্স বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তো। ঐ ছেলের বাড়িও ছিল চাপাই-তে, সে রোজিদের প্রতিবেশী ছিল।
তার সাথে রোজির ঝামেলা হয়েছিল কোনো একটি বিষয়ে, সম্ভবতঃ সে অন্য কোনো একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। রোজির সাথে তার শারীরিক সম্পর্কও হয়েছিল – রোজির কথাবার্তায় সেটা অাঁচ পাওয়া যায়।
মনোমালিন্য চলছিল এমন একটা সময়ে রোজি ফোনে আমার সাথে যোগাযোগ করে। তখন আমি ঢাকা থাকতাম, পড়তাম দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা ডিপার্টমেন্টে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়)। তখন টিউশনি করাতাম এবং টিউশনির জন্য প্রায়ই খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিতাম। এরকম কোনো একটি বিজ্ঞাপন দেখেই রোজি আমার মোবাইল নাম্বার পায়।
মেধাবী এবং ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এমন ছেলে মনে করে সে আমার সাথে যোগাযোগ করে। আমিও একটা ইয়াং মেয়ের সাথে আলাপের সুযোগ মিস করতে চাইলাম না। তার ও আমার – দু’জনেরই ছিল সিটিসেল মোবাইল। সে সময় সিটিসেল রাত জেগে কল করাটা ফ্রি করে দিয়েছিল। তাই রোজি ও আমি বেশ কয়েক রাত এভাবে জেগে জেগে কথা বলে কাটিয়ে দিলাম। সে তার অনেক দুঃখ এবং না পাওয়ার কথা আমার সাথে শেয়ার করলো। আমিও তাকে নিজের ব্যক্তিগত কিছু কথা বললাম।
একদিন রাতে সে তার ঐ প্রেমিকের কথা বলে খুব কান্নাকাটি করলো, আমি তাকে যথাসম্ভব স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার মনে ছিল অন্য মতলব, তার সাথে প্রেম করার মতলব। তার ভাবসাবে মনে হলো, সে এখন আমার সাথে প্রেম করবে। সে আমাকে তাদের কলেজ ক্যাম্পাসে বেড়াতে যেতে বললো, আমিও সময় করে গেলাম।
সে আমাকে যতটা হ্যান্ডসাম কল্পনা করেছিল, ততটা না হওয়ায় কিছুটা হতাশ হলো বটে, তারপরও আমাকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে চাইলো। তাইতো যখন হোস্টেলের আয়াকে দিয়ে তাকে ডেকে পাঠালাম, সে আমাকে একটা আড়ালের জায়গায় নিয়ে গেল, যাতে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে কিস-টিস কিছু একটা করি। কিন্তু বোকাচন্দ আমি সেটা না করে আরেকটা মেয়েকে হাতছাড়া করলাম। মূলতঃ রোজি যখন বুঝতে পারলো, আমি এসব বিষয়ে এক্সপার্ট না, তখনই সে মনে মনে আমার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেললো।
তারপরও পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক, তারা ছয়জন ক্লাসমেট (সবগুলো মেয়ে) এবং আমি তাদের এক হিন্দু ক্লাসমেটের (নাম সম্ভবতঃ লোপা ছিল) দিদির বিয়েতে অ্যাটেন্ড করতে নওগাঁ গেলাম ট্রেনে করে। সেখানে ট্রেনে কিছুটা মজা হলো বটে, কিছু রোমান্টিক চাহনি বিনিময় – এইসব আর কি! এতগুলো মেয়ে, যদিও কোনোটাই খুব সুন্দর নয়, তারপরও কোনটাকে ছেড়ে কোনটাকে বেছে নেব – সেটা ঠিক করতে পারছিলাম না।
বিয়েবাড়িতে গিয়ে আরো দুই পুরুষের সাথে সাক্ষাৎ হলো, এদের একজনের বাড়ি চুয়াডাঙায়, সে লোপার কাজিন হয় এবং দ্বিতীয় পুরুষটি হলো সেই কাজিনের বন্ধু, যার বাড়ি বরিশালে। যাই হোক, উক্ত পুরুষদ্বয়ের সাথে থাকার ব্যবস্থা হলো। তাদের সাথে এবং মেয়েগুলোর সাথে বেশ মজা করলাম, হেঁটে এবং নৌকায় বেশ কিছু জায়গা ঘুরে বেড়ালাম। এক পর্যায়ে ঐ পুরুষদ্বয় (তাদের সাথে ইতিমধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল) একজোট হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আমি আসলে কী উদ্দেশ্যে এতদূর পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। কারণ, মেয়েগুলোর কোনোটিই আমার কোনো আত্মীয় বা পূর্বপরিচিত ছিল না। তারা জানতে চাইলো, আমি রোজিকে পছন্দ করি কিনা।
আমি সত্যটা বললাম, তখন রোজির কাছে তার প্রেমজীবন সম্পর্কে জানতে চায় তারা। তারা হয়তো আগে থেকেই জানতো যে, রোজির একজন প্রেমিকপুরুষ আছে। তখন রোজি জানাল যে, তার সাথে তার প্রেমিকের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে, তারা এখন পুনরায় একটি ‘সুখী দম্পতি’। এতে খুবই হতাশ হলাম আমি। উক্ত পুরুষদ্বয় আমার হয়ে রোজির কাছে উমেদারী করলো, তখন সেটা নাকচ করে দিল সে।
তখন আমার বন্ধুদ্বয় রোজির সাথে আমার পূর্বাপর সব জানতে চাইলো। আমি সব জানানোর পর তারা বললো, ‘রোজি যখন আপনাকে চিপায় নিয়ে গেল, তখন সাথেসাথেই আপনি কেন তাকে চকাস-চকাস করে কয়েকটি চুমু খেলেন না?! সেখানেই আপনার ভুল হয়েছে। জানেন তো, প্রেম করলে মধু খেতে হয়!’ যাই হোক, আমার শট আমি আগেই ব্লো করে দিয়েছি, আমার আর কিছু বলার ছিল না। তাই বলতে চাই, বন্ধুগণ, নতুন কোনো সম্পর্ক শুরু করার সময় একটু গভীরভাবে ভেবে নিন, ‘আপনি কি আপনার প্রেমিক/প্রেমিকার প্রিয়জন না প্রয়োজন?’ আর পুরুষদের উপদেশ দেব, মধু খাওয়ার সুযোগ পেলে ছাড়বেন না!
