ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সম্পর্কে উচ্চ প্রশংসা প্রথম শুনেছিলাম স্কুলের এক ‘ফাতরা’ টিচারের কাছ থেকে। তাঁর নাম জলিল স্যার, ওনার বাড়ি ছিল বরিশালে আর তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়তাম। আমার কাছে তিনি আরো ‘ফাতরা’ ছিলেন বেশ কয়েকটা কারণেঃ (১) ক্লাসে প্রথম দিন এসেই তুচ্ছ কারণে আমার হাতের তালুতে বেত্রাঘাত করেন (২) দ্বিতীয়তঃ ক্লাস টেনের টেস্ট পরীক্ষায় আমি যখন অভূতপূর্ব রেজাল্ট করি, তখন হেডস্যারের আদেশ ছিল প্রতিটি টিচারের কাছে, যাতে আমাকে ফ্রি পড়াতে বাধ্য থাকেন। এই সুযোগে জলিল স্যারের বাসায়ও গিয়েছিলাম কয়েকদিন। এস.এস.সি.’র রেজাল্টের পর স্কুলে মিষ্টি নিয়ে গেলেও প্রতিটি স্যারের বাসায় আলাদাভাবে মিষ্টি নিয়ে যাই নি। আর তাতেই জলিল স্যারের বউ সুযোগ পেয়ে আমার মাকে একটি কটু কথা শোনায়, ‘হেলিগাই গরীব মানুষের পোলাপানরে পড়াইতে হয় না’।
আমি ঠিক গরীব ছিলাম না, আর টেস্ট পরীক্ষার পরে কোনো স্যারের কাছ থেকে কোনো ধরনের লেসন নেওয়ার দরকারও আমার ছিল না। শুধুমাত্র হেডস্যার আমাকে যে সুযোগ দিয়েছিলেন, সেটা ব্যবহার করে কয়েকজন স্যারের বাসায় গিয়ে তাঁদের জীবনযাপনের স্টাইল ও পড়ানোর ধরন সম্পর্কে জানার আগ্রহ ছিল। জলিল স্যারের বউ যে কটু কথাটা বলেছিলেন, তাতে স্যারের সমর্থন ছিল তো বটেই, নইলে তিনি এটা বলার সাহস কোত্থেকে পেলেন? যাই হোক, এইসব ‘ফাতরা’মির শাস্তি জলিল স্যার পেয়েছিলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো একটা কারণে তাঁকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করে এবং দীর্ঘদিন তিনি বেকার অবস্থায় ছিলেন। পরে শেষ পর্যন্ত তিনি আগের চাকুরিটা ফেরত পেয়েছিলেন কিনা কিংবা এখন কোথায় আছেন, কী করেন – সেসব জানি না।
যাই হোক, স্কুলের এক ফাতরা টিচারের কাছ থেকে প্রশংসা শুনেছিলাম এক ‘ফাতরা’ শাসকের, আর তাঁর নাম আইয়ুব খান। যদিও পাকিস্তান পিরিওডে তাঁর দশ বছরের শাসনামল সম্পর্কে বেশিরভাগ লোকজনই পজেটিভ কথাবার্তা বলে, এমনকি আমিও তাঁকে শ্রদ্ধার চোখেই দেখতাম, তবে সেটা গত পরশুদিনের আগ পর্যন্ত। সম্প্রতি তাঁর সম্পর্কে এমন একটি তথ্য জানতে পেরেছি যে, তাতে আমি বুঝতে পারলাম, আমার জীবনে যত অশান্তি গেছে, তার বেশিরভাগের ব্যবস্থা আইয়ুব খান করে রেখেছিলেন আজ হতে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগেই।
ঠিক আছে, আর ভনিতা না করে এবার আসল কথাটা খুলে বলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক মারফত জানতে পেরেছি যে, মুসলিম পুরুষেরা দ্বিতীয় বিবাহ করার পূর্বে যে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগে, সেই প্রথা চালু করে গিয়েছিলেন আইয়ুব খানই। বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও ঐ স্বৈরাচারের আইন এখনো বদলায় নি। এই আইন না থাকলে আমি অনেক আগেই দ্বিতীয়, দরকার হলে তৃতীয় বিবাহ করতে পারতাম। অর্থাৎ আমার প্রথম স্ত্রী মুক্তা যেভাবে আমাকে বিভিন্ন কৌশলে নির্যাতন করেছে, সেটা করার সুযোগ সে তখন পেত না। আমাকে নির্যাতনে তার একটি কৌশল হলো – সে আমার সাথে শুতে চায় না, সে সম্ভবতঃ শংকিনী টাইপের মহিলা (কামসূত্র অনুসারে)। এ ধরনের মেয়ে বা মহিলাদের যৌন চাহিদা অত্যন্ত কম থাকে। অন্যদিকে আমি হলাম হস্তিনী’র পুরুষ ভার্সন, আমার সেক্স চাহিদা অত্যন্ত বেশি – যদিও দু’একটি অসুখের কারণে তা দিনদিন কমে যাচ্ছে।
এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, ‘দুইটা বউ খাওয়ানোর মতো সামর্থ্য কি আপনার আছে?’ উত্তরে বলবো, ‘হ্যাঁ, সেটা আমার প্রায় সবসময়ই ছিল।’ তাছাড়া আমি উচুঁ ক্লাসের ফ্যামিলির মেয়ে বিয়ে করতে কম আগ্রহী। আমি মূলত মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্তদের প্রতি বেশি আগ্রহী। উদাহরণস্বরূপঃ আমার বউ মুক্তাও মধ্যবিত্ত টাইপের ফ্যামিলির মেয়ে ছিল, কিন্তু সম্প্রতি তার এক ভাই ডাক্তারি পাশ করে বড় মাপের ডাক্তার হওয়ার পথে যাত্রা করেছে বলে তাদের ধারণা, তারা এখন এলিট ক্লাসের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। তাই তো আমার সাথে যাচ্ছে-তাই ব্যবহার করছে গত দু’তিন বছর ধরে – আমার বাচ্চা জন্মের পর হতেই। বাচ্চা জন্ম দিলে তারা যে আমার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারে, সেটাও আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। তাই তো ২০০৬ সালে বিয়ে করে বাচ্চা জন্ম দিয়েছি ২০১৬ সালে, দশ বছর পর। কেউ কি কখনো শুনেছেন, সন্তান উৎপাদনে সক্ষম এমন কোনো বাঙালী দম্পতি বিয়ের দশ বছর পর বাচ্চা নেয়? আমি নিয়েছিলাম, কারণ বিয়ের পরপরই বুঝতে পেরেছিলাম যে, এক ‘ইতর’ ফ্যামিলির পাল্লায় পড়েছি।
ডায়াবেটিসের কারণে আর কতদিন বাঁচবো সেটা জানি না। আসলে ডাক্তারদের চিকিৎসাকে আমি ভয় পাই, তাই অন্যান্য ডায়াবেটিক রোগী গড়ে যতদিন বাঁচে, আমি সম্ভবতঃ তার চেয়ে কম বাঁচবো। এগুলো বলছি, কারণ অলরেডি আমার কিডনী এরিয়াতে ও বাম পায়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যাই হোক, মেইন পয়েন্ট হলো, মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও আরেকটা বিয়ে করার খায়েশ আমার এখনো যায় নি। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন, আমি আমার এক ছাত্রীকে বিয়ে করবো। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম এবং ধুমসে টিউশনি করাতাম, তখন আমার ফেবারিট ছাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন ছিল মুন্নি, শশী, তাজরী প্রমুখ। এদের কাউকে হারিয়েছি মাথা গরম করে, কাউকে হারিয়েছি ভাগ্যদোষে, আবার কাউকে হারিয়েছি ভুল বোঝাবুঝিতে। শেষে এমন একজনকে বিয়ে করলাম যে কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের, যার সাথে আমার মানসিকতায় কোনো মিলই নেই। এমনিতে সে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী টাইপের, কিন্তু আমাকে কীভাবে সাফার করাতে হয় সেটা সে ও তার পরিবারের লোকজন, বিশেষ করে আমার শ্বাশুড়ি ভালো করেই জানে।
যৌন সম্ভোগের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করা হলো আমাকে শাস্তি প্রদানের একটি কৌশল, আর তাই আমি দ্বিতীয় বিবাহ করতে আগ্রহী। যেহেতু জীবনের বিনিময়ে বুঝতে পেরেছি যে, শ্বশুরবাড়ির ধনসম্পদ আসলে কোনো কাজে লাগে না, তাই এখন আমি একটি দরিদ্র তবে পরিচ্ছন্ন ফ্যামিলির মেয়ে বিবাহ করতে আগ্রহী। আর যদি ‘ছাত্রী’ বিবেচনায় নেই, তাহলে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারে রূপা ও তাবিতা। তবে তাবিতার টিউশনিটা যেহেতু ছেড়ে দিতেই যাচ্ছি, তাই ওদের পরিবারের সাথে আমার আর কোনো বনিবনা হবে বলে মনে হয় না। প্লাস, মেয়েটা বেয়াদব টাইপের এবং সেক্স চাহিদার দিক থেকে ‘শংকিনী’ হতে পারে বলে আমার ধারণা; সুতরাং আরেকটা ‘মুক্তা’কে জীবনে জড়িয়ে তো লাভ নেই, তাই না? এছাড়া, তাবিতারা যতটা না ধনী, তার চেয়ে বেশি ধনী মনে করে নিজেদেরকে। সুতরাং তাদের এই একচুয়াল ও কাল্পনিক ‘ধনসম্পদের ঝাল’ তো আমার উপর এমনিতেই মেটাতে চাইবে, তাই তাবিতার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিতে চাচ্ছি।
তাহলে আপাততঃ বাকি থাকলো রূপা, কিন্তু ওরা একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দেয় নি, আর সেটা হলো ওর ছোট বোনের আকিকার সময়। এমনিতে ওরা আমার প্রতিবেশী, তার উপর সে সময় রূপাকে প্রাইভেট পড়াতাম। তাই আমাকে দাওয়াত না দিয়ে অন্যান্য লোকজন, যেমনঃ জঙ্গী আনিস হুজুর, মিঠু মোল্লা ও তাঁর ফ্যামিলিকে কীভাবে দাওয়াত দিলো, বুঝতে পারলাম না। রূপার ছোট বোনের নাম ‘রাইসা ইসলাম’ নাকি আনিস রেখেছে, অথচ এর আগের দিন আমিই ইন্টারনেট ঘেঁটে রূপাকে ‘রাইসা’ নামটা বেছে দেই। এই ঘটনার পর থেকে এবং আরো কয়েকটি কারণে রূপাদের মনমানসিকতা নিয়ে আমি সন্দীহান। এমনিতে রূপগঞ্জে দীর্ঘদিন বসবাস করলেও তাদের অরিজিনাল হোম ডিস্ট্রিক্ট বরিশাল বিভাগের ‘ভোলা’য়। তাই ভাবছি, ‘বরিশালের কালিমা’ তারা এখনো সারপাস করতে পেরেছে কিনা; এক বরিশালনিকে নিয়েই তো জীবন তছনছ, আরেক বরিশালনিকে জীবনে ইনক্লুড করবো কিনা। এসব সাত-পাঁচ ভাবি, আর আইয়ুব খানকে মনে মনে গালি দেই, দ্বিতীয় বিবাহের পথটা কণ্টকে পরিপূর্ণ করার জন্য।